যে ভাষায় কথা বলেন মাত্র ৭ জন - All News Paper

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, February 20, 2024

যে ভাষায় কথা বলেন মাত্র ৭ জন

 যে ভাষায় কথা বলেন মাত্র ৭ জন 

শাহরিয়ার অনির্বাণ, ঢাকা

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

উপভাষা নয়, একেবারেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের পূর্ণাঙ্গ ভাষা রেংমিটচ্য। যার রয়েছে আলাদা শব্দ, বাণী, ছন্দ। কিন্তু, দীর্ঘদিনের অবহেলায় বিলুপ্তির পথে বান্দরবানের ম্রো জনগোষ্ঠীর ভাষাটি। এই ভাষাটি জানেন এমন জীবিত ব্যক্তির সংখ্যা এখন মাত্র ৭জন। 


তবে, আলীকদমে শুরু হয়েছে রেংমিটচ্য ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম। ম্রো অক্ষরের সহায়তায় শিশুদের অমর একুশের গান শেখাচ্ছেন পঞ্চম শ্রেণি পাস এক ম্রো যুবক। 


আলীকদমের দুর্গম পাহাড়ের ভাঁজে ক্রাংসিপাড়া। সেখানে ম্রো জাতিগোষ্ঠীর দিন শুরু হয় সূর্যোদয়ের সাথে, নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র প্লুংয়ের সুরে। 

সত্তরোর্ধ্ব কুনরাও ম্রো, রেংমিটচ্য ভাষা জানেন, এমন জীবিত শেষ কয়েকজনের একজন। রেংমিটচ্য ভাষা জানা প্রতিবেশী মাংপুং ম্রোর সাথে চলে কুনরার আলাপ।

কুনরাও ম্রো বলেন, ‘আমি রেংমিটচ্য কথা জানি। এখন কেউ এই ভাষায় কথা বলেনা।’  

রেংমিটচ্যয় কথা বলেন বান্দরবানের আলীকদমের তৈনফা গ্রামের হেডম্যান রেংপুং ম্রো। তবে নাতিদের সাথে খুনশুটি করেন ম্রো ভাষায়। পরবর্তী প্রজন্মের কেউ ভাষা না জানায় নেই চর্চাও। ম্রো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র ৭ জন এ ভাষায় কথা বলেন। 

রেংপুং ম্রো বলেন, ‘এখন আর কিছু নাই। সব মিলায় মিলায় শেষ। আমি মগ ভাষা জানি, ত্রিপুরা ভাষা জানি, বাংলা ভাষা জানি। কিন্তু লিখতে পারি না।’

ক্রাংসিপাড়ায় সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামলেই শুরু হয় সিংরা ম্রো'র স্কুল। দূর থেকে ভেসে আসে শিশুদের সমবেত কণ্ঠে কয়েকটি শব্দ ‘কা ই থি মলিং প্লত, কা ই তোমা নং ওয়েত’। এর অর্থ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।  

বিলুপ্তির হাত থেকে রেংমিটচ্য ভাষা রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন এই যুবক। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাকে পুঁজি করে গড়ে তুলেছেন রেংমিটচ্য ভাষা শিক্ষার স্কুল। 

সিংরা ম্রো বলেন, ‘আমি চাই, যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন এটা (রেংমিটচ্য) পড়াব। বয়স্ক হোক বা ছোট বাচ্চা হোক তারা যদি চায়।’ 

নিজস্ব অক্ষর না থাকায় ম্রো অক্ষর দিয়ে গড়া হয়েছে তিন হাজার চারশ শব্দের রেংমিটচ্য অভিধান। যেখানে স্থান পেয়েছে কৃষি, সংস্কৃতি, ধর্ম, খাবার, দৈনন্দিন জীবনে রেংমিটচ্য ভাষার শব্দ। 

রেংমিটচ্য ভাষা গবেষক ইয়াংঙান ম্রো বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টায় জুমের কাজ অনেকটা কম। কিন্তু এপ্রিল থেকে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, যে পড়ার সময় আর থাকবে না। অনেকেই তখন পরিবার নিয়ে জুম চাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আমরা চেষ্টা করব, প্রতি বছর অন্তত তিন থেকে চার মাস পড়ানোর।’ 

বিশ্বের ৬ হাজারেরও বেশি ভাষার অন্তত ৪৩ ভাগ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে। কোন ভাষা হারিয়ে গেলে বিশ্ব বঞ্চিত হয় তার ঐতিহ্য থেকে। তাই, ২০৩২ সাল পর্যন্ত সময়কে নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণের দশক ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। 

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages