ডিবি পরিচয়ে হাতিয়ে নেয় ৩৬ লাখ - All News Paper

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, February 20, 2024

ডিবি পরিচয়ে হাতিয়ে নেয় ৩৬ লাখ

 ডিবি পরিচয়ে হাতিয়ে নেয় ৩৬ লাখ

ডাকাতির টাকায় কেনা হয় গাড়ি, জমি ও মোটরসাইকেল


২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪


ইসরাত ফ্যাশনের এমডি জাকির হোসেন। গত বছরের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের রূপসার একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। গাড়িতে ছিল ৩ লাখ টাকা। আরও ২৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন যমুনা ব্যাংকের উপশাখা থেকে। যৌথভাবে একটি জমি কেনার জন্য মোট সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ওঁত পেতে থাকা ডাকাতদের খপ্পরে পড়েন তিনি। গাড়িতে থাকা ভাগনেসহ ব্যবসায়ী জাকিরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। হাত-পা বেঁধে তাদের পূর্বাচলে ফেলে চলে যায় ডাকাত দল।


গত বছরের ৯ অক্টোবর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ডাকাতি ঘটনার শিকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, দিনের বেলায় কেউ পেছন থেকে ফলো করবে ভাবিনি। সঙ্গে আমার ভাগনে ছিল। একটি জমি যৌথভাবে কেনা ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলাম। ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর পৌঁছালে পেছন দিক থেকে ফলো করে আসা ঢাকাগামী একটি কালো রঙের গাড়ি আমাদের গতিরোধ করে। সামনে দাঁড়িয়ে ওয়াকিটকি ও পিস্তল দেখিয়ে গাড়ি থেকে নামায়। নামতেই ১০-১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ভাগনেসহ আমার হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে।



তিনি বলেন, আমাদের গাড়িতেই আমাদের জিম্মি করে তারা সড়কে ঘোরাঘুরি শুরু করে। গাড়িতে কত টাকা আছে জানতে চায়। ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার সব হাতিয়ে নেওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে পূর্বাচল বাণিজ্যমেলা সংলগ্ন সারুলিয়া এলাকায় আমাদের রাস্তার পাশে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয়দের কথামতো এলাকার নাম জেনে নিজ এলাকায় যাই আমরা। এরপর ডেমরা থানায় মামলা দায়ের করি।
মামলা দায়েরের পর ছায়াতদন্ত ও ডাকাত দলের সন্ধানে নামে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি টানা অভিযানে রাজধানীর ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা এবং পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দলের দুই সদস্য আবুল কাশেম ওরফে জাহিদ (৪৫) এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে (৩৯) গ্রেফতার করে ডিবির ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিম।

আবুল কাশেমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, তিনটি গাড়ি এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। তবে লুণ্ঠিত টাকার মাত্র ২০ হাজার টাকা উদ্ধারে সমর্থ হয় ডিবি পুলিশ। দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ডিবি ওয়ারী বিভাগের কর্মকর্তারা।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ জানায়, ধরা পড়ার ভয়ে ডাকাত দল ডাকাতির টাকা গাড়ি ও জমি কেনায় ইনভেস্ট করে। যেন সেই টাকা ফেরত দিতে না হয় বা নষ্ট না হয়। পরে ডাকাতির টাকায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করে আবার তারা ডাকাতিতে নামে।
এ ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বিদেশ আসা কোনো ব্যক্তি বা কোনো নতুন গাড়ি এলে বা কেউ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলে, জমি বিক্রি করলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুণ্ঠনের অভিযোগ আসে। এরকমই একটি অভিযোগ করেন একজন ব্যবসায়ী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা মোস্তাফিজুর রহমান ও আবুল কাশেম ওরফে জাহিদ নামে দুজনকে গ্রেফতার করি। মোস্তাফিজের নামে পাঁচটি ও কাশেমের নামে তিনটি মামলা রয়েছে। এসব ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় একাধিকবার তারা জেলে গেছে।
গ্রেফতার দুজন সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন উল্লেখ করে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, আমরা বেশি টাকা উদ্ধার করতে পারিনি। তখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, ডাকাতির ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় তারা কী করেছে? জিজ্ঞাসাবাদে ও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তারা বলেছে, দুজনের নেতৃত্বে একটি ডাকাত দল দীর্ঘ কয়েক বছর দরে ডাকাতি পেশায় জড়িত। তারা ধরা পড়ার ভয়ে ডাকাতির টাকা নষ্ট বা বণ্টন না করে ইনভেস্ট করতো। তারা তিনটি গাড়ি কিনেছে, একটি মোটরসাইকেল কিনেছে।

তিনি বলেন, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস এবং পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানা এলাকা থেকে ডাকাতির লুণ্ঠিত টাকায় কেনা একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি প্রাইভেটকার, একটি মাইক্রোবাস এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

পিস্তল-ওয়াকিটকি দেখিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির কৌশল
গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ডাকাতিকালে ব্যবসায়ী জাকিরকে কবজা করে সব টাকা লুণ্ঠনের পর হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ছবি তোলে ডাকাতরা। কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়ে বলে ‘তুমি যে অস্ত্রবাজ এই ছবি প্রকাশ করবো। তুমিই হবে তখন ডাকাত অস্ত্রবাজ। বাড়াবাড়ি করলে তোদের অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেবো।’

এডিসি শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, এর আগেও এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভারের ওপর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকেও আমরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে গ্রেফতার করেছিলাম। এ ধরনের ঘটনায় প্রথম কাজ হচ্ছে ডিবি পুলিশকে অবহিত করার আগে থানায় অবহিত করা, জিডি বা মামলা করা। তাহলে পুলিশের পক্ষে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতিতে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব।


No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages