মিছিলে নির্বাচনকে অবৈধ দাবি করে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2024, 07:07 PM
Updated : 27 Jan 2024, 07:07 PM
গ্রেপ্তার এড়াতে টানা তিন মাস ‘আত্মগোপনে’ থাকার পর একসঙ্গে প্রকাশ্যে এসে রাজধানী ঢাকায় ‘কালো পতাকা’ মিছিল করেছে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী।
শনিবার মাথায় কালো টুপি পরে হাতে কালো পতাকা নিয়ে তারা মিছিলে অংশ নেন। দীর্ঘদিন বাদে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও কর্মীদের দেখা গেছে মিছিল ও সমাবেশে।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর বিভিন্ন মামলায় কেন্দ্রীয় নেতাসহ একাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা শুরু হলে আত্মগোপনে যান অধিকাংশ নেতারা। টানা হরতাল-অবরোধের সময়ে এবং নির্বাচন চলাকালেও তাদের দেখা মেলেনি।
বিএনপির বর্জনের মধ্যে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এদিন নতুন করে সংঘটিত হয়ে কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্যদের এই প্রথম রাজপথে দেখা গেল। কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিতে তারা বড় ধরনের উপস্থিতির জানান দিলেন।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সে সময় মামলার পর পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। তখন অধিকাংশ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে যান।
২৮ অক্টোবরের পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেলেও অন্যদেরকে দেখা যায়নি।
এদিন আত্মগোপনে থাকা নেতারা প্রকাশ্যে এসেছেন। কালো পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল সহকারে কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল হক চৌধুরী, আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, সেলিম ভুঁইয়া, রফিকুল ইসলাম, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, এম এ মালেক, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর নেওয়াজ আলী, সেলিম রেজা হাবিব, রাশেদা বেগম হীরা, বিলকিস ইসলাম, হারুনুর রশীদ, রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিকাল সাড়ে তিনটায় মিছিলটি শুরু হয়। এরপর নাইটিঙ্গেল রেস্টুরেন্ট মোড় দিয়ে ফকিরাপুল ও আরামবাগ মোড় ঘুরে আবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে মিছিলটি শেষ হয়।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ‘ডামি’ নির্বাচনের দ্বাদশ সংসদ বাতিলের দাবিতে বিএনপি ঢাকাসহ দেশের মহানগরগুলোতে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করে। এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
ঢাকায় মিছিলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে কালো পতাকা মিছিলে আবারও নির্বাচনকে অবৈধ দাবি করে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।
মিছিলে ‘অবৈধ সরকার, মানি না, মানব না’, ‘অবৈধ সংসদ মানি না, মানব না’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘ভোট চোর ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’ এমন নানান স্লোগান দেওয়া হয়। কর্মীদের অনেকের হাতে দলের গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের মুক্তির দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও ছিল।
মিছিলের আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘আজকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, এই দেশ আমাদের, এই দেশের সমস্যা আমাদের, এই দেশের সমস্যা সমাধান আমরাই করব। সেকারণে আজকে ভারত, চীন আর রাশিয়া তাদের সরকার হাসিনার সরকার, এটা বাংলাদেশের জনগণের সরকার না।
‘‘আবারও বলছি, হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের সরকার না। সেজন্য এই সরকার আমরা মানতে বাধ্য নই। আজকে আমাদের এই লড়াই শুধু ভোটের লড়াই নয়, আমাদের ভাগ্যের লড়াই, আমাদের গণতন্ত্রের লড়াই, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের লড়াই।”
কয়েকদিন আগে সীমান্তে একজন বিজেবি সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, আমাদের সীমান্তে মানুষ মারা যাচ্ছে, কয়েকদিন আগে আমাদের বিজেবি সদস্য মারা গেছে। কোনো প্রতিবাদ নাই কেন? কী কারণে কোন অধিকারে তারা আমার দেশের সীমান্ত রক্ষীর ওপর গুলি করবে? কথায় কথায় ধরে নিয়ে যায় আমাদের সাধারণ মানুষকে।



No comments:
Post a Comment