![]() |
| হাসিনা-মোদির বৈঠকে ৭ চুক্তি ও ৩ প্রকল্প উদ্বোধন ॥ তিস্তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি |
# দিনকাল রিপোর্ট
দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাদশাহী পোলাও থেকে শুরু করে চেন্নাইয়ের মালপোয়াসহ হরেক রকমের আড়ম্বরপূর্ণ ভেজিটেরিয়ান খাবার দিয়ে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগে দুই শীর্ষপ্রধানের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জনগণের উন্নয়নে ফেনী নদীর পানি উত্তোলন ও বন্দর ব্যবহারসহ একাধিক চুক্তি এবং সমঝোতা সই হলেও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের চাহিদা তিস্তার পানি বন্টন এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কার্যকর কোনো ঘোষণা আসেনি।
খাবারের টেবিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের খাবারই ছিল বেশি। উত্তর ভারতের বিখ্যাত খাবার দইয়ে ডোবানো পাপরি, বাদশাহী পোলাও, উত্তর ভারতের আরেক বিখ্যাত মাশরুমের পদ, শাহী ডাল এবং চেন্নাইয়ের মালপোয়াসহ প্রচুর আইটেম ছিল। সবশেষ ছিল কফির চুমুক। আর এই সময়ে বাজছিল পুরনো দিনের জনপ্রিয় গান ‘তুমকো দেখাতো ইয়ে খেয়াল আয়া’, ‘একলা চলোরে’, ‘রাঘুপাতি রাঘব’, ‘রাম রতন ধান পায়ো তো’, ‘ওহ সাম কুছ আজিব থি’ ইত্যাদি।
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠক শেষে তাদের উপস্থিতিতেই সাতটি চুক্তি সই হয়। এ সময় দুই দেশের সরকারপ্রধান তিনটি যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
শীর্ষ বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যৌথ বিবরণী প্রকাশ করে। বিবরণীতে বলা হয়েছে, দুই দেশের সম্পর্ক বিশ্বের যে কোনো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত। যৌথ ইশতেহার থেকে জানা গেছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জনগণের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ভারতকে গ্যাস সরবরাহ, ফেনী নদীর পানি উত্তোলনসহ বন্দর ব্যবহারের জন্য রাজি হয়েছে। ত্রিপুরার সাবরুম অঞ্চলের পানির চাহিদা মেটাতে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে ভারতকে উত্তোলনের অনুমতি দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এতে নয়াদিল্লি ঢাকার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষা তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। যৌথ ইশতেহারে ভারত আগের মতোই অতি দ্রুত এই বিষয়ে সমাধান আসবে বলে মন্তব্য করেছে।
যৌথ ইশতেহার থেকে আরও জানা গেছে, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সক্রিয় কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি ভারত রোহিঙ্গা শব্দও উচ্চারণ করেনি। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী হিসেবে বলা হয়েছে। মিয়ানমার সরকারও রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করে না। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দেয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য যৌথ ইশতেহারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও মানবিক সহায়তা (ত্রাণ) দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
ইউএনবির খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতেই দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি সই হয়। এগুলোর মধ্য অন্যতম হলোÑ উপকূলীয় এলাকায় নজরদারিতে সহযোগিতা বিনিময়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। সই করা সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত। এই পানি ভারত ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে। নতুন যেটা তা হলো, তিস্তা ছাড়াও আরও ছয়টি অভিন্ন নদীর (মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার) পানি কীভাবে ভাগাভাগি করা যায়, অবিলম্বে তার একটি খসড়া কাঠামো প্রস্তুত করতে দুই নেতা যৌথ নদী কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়েছে। বাংলাদেশকে দেয়া ভারতের ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি চুক্তি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসব সমঝোতা স্মারক ছাড়া সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিনিময় এবং যুব উন্নয়নে সহযোগিতা নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
চুক্তি ও সমঝোতাপত্র বিনিময়ের পর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। প্রকল্পগুলো হলো খুলনায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে বাংলাদেশ-ভারত প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে বিবেকানন্দ ভবন এবং বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি আমদানি প্রকল্প।
কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর পূজা উপলক্ষে ৫০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। এই ইলিশ সম্প্রতি ভারতে পৌঁছেছে। ইলিশ পৌঁছানোর চার দিন পরই নয়াদিল্লি বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এরপরই দেশজুড়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে ভারত যান। সেখানে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রাঁধুনিকে বলেছি পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করতে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে তিস্তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হবে না, তা আগেই কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। তবে ফেনী নদীর পানি ইস্যুতে নতুন ঘোষণার কথাও শোনা যাচ্ছিল। সমঝোতা স্মারকে তাই হলো।


No comments:
Post a Comment