কর্মীসঙ্কটে নাজেহাল জার্মানি! হাল ফেরাতে মরিয়া সরকার, ‘লোক খুঁজতে’ দেশে দেশে ঘুরছেন মন্ত্রীরা - All News Paper

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, January 30, 2024

কর্মীসঙ্কটে নাজেহাল জার্মানি! হাল ফেরাতে মরিয়া সরকার, ‘লোক খুঁজতে’ দেশে দেশে ঘুরছেন মন্ত্রীরা

 জার্মানির আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। লোকের অভাবে থমকে গিয়েছে দেশের শিল্প, কমেছে উৎপাদন। জার্মানির এই কর্মীসঙ্কট নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাও হয়েছে। কর্মীসঙ্কটে জেরবার জার্মানি সমাধান সূত্র খুঁজতে মরিয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৪

বছর পাঁচেক আগেও জার্মানির ছবিটা এমন ছিল না। কর্মক্ষেত্রে লোকের অভাব ছিল না। প্রায় সব ক্ষেত্রেই কাজের লোক ছিল। শুধু জার্মানরা নন ন়য়, ভিন্‌দেশ থেকেও চাকরি করতে জার্মানিতে ভিড় করতেন বহু মানুষ। কিন্তু ২০২০ সালের পরে সে ছবি আচমকা পাল্টে যেতে থাকে। জার্মানি ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়।

জার্মানির আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। লোকের অভাবে থমকে গিয়েছে দেশের শিল্প, কমেছে উৎপাদন। জার্মানির এই কর্মীসঙ্কট নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাও হয়েছে। কর্মীসঙ্কটে জেরবার জার্মানি সমাধান সূত্র খুঁজতে মরিয়া। নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও অনেক বদল আনা হয়েছে। বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ করতে উদ্যোগী হচ্ছে সরকার।


জার্মানি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার ও শ্রমমন্ত্রী হুবার্টাস হেইল বর্তমানে ভিয়েতনাম সফরে রয়েছেন। সে দেশের সরকারের বিভিন্ন আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করছেন, চুক্তি সই হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, জার্মানিতে কাজ করতে আসার জন্য সে দেশের তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করা।

সংবাদমাধ্যম ডিডব্লিউ-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিয়েতনামি-জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় সেখানকার পড়ুয়াদের থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার। অনেকেই নাকি জার্মান সংস্থায় কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছেন। এ ছাড়াও ভিয়েতনামে প্রতি বছর বহু তরুণ-তরুণী জার্মান ভাষা শিখছেন বলেও জানিয়েছেন ওয়াল্টার।

২০২৩ সালের শেষের দিকে জার্মানি সরকার নতুন অভিবাসন আইন এনেছে। যার ফলে জার্মানিতে নাগরিকত্ব পেতে সুবিধা পাবেন অভিবাসীরা। আন্তর্জাতিক বিশেষ়জ্ঞদের মতে, জার্মানে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের অভাব মেটাতেই অভিবাসন আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন অভিবাসন আইনের অধীনে জার্মানিতে পাঁচ বছর বসবাস করলেই বিদেশিরা জার্মান পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এমনকি ইন্টিগ্রেশন বা জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ‘অসাধারণ যোগ্যতা' অর্জন করলে তিন বছরের মধ্যেই নাগরিকত্ব অর্জনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

শুধু ভিয়েতনাম নয়, মরক্কো, ফিলিপিন্স, ভারতের মতো দেশগুলিতেও সফরে যাচ্ছেন জার্মানের বিভিন্ন মন্ত্রী, আমলারা। জার্মানির ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির তথ্য অনুসারে, সে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরিতে ১৭ লক্ষেরও বেশি শূন্যপদ রয়েছে।

সমীক্ষা বলছে, এখন যা পরিস্থিতি তাতে জার্মানিতে প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ ‘কাজের লোক’ এর প্রয়োজন। সম্প্রতি শ্রমমন্ত্রী হুবার্টাস হেইল জার্মানিকে কাজের উপযুক্ত গন্তব্য হিসাবে প্রচার করতে ভারত, ব্রাজিল, কেনিয়া সফর করেছেন।

প্রশ্ন উঠছে কেন জার্মানি ছাড়তে শুরু করেছিলেন বিদেশিরা? সে দেশে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে জার্মান ভাষাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হত। একটা সময় ছিল যখন জার্মান রাজনীতিবিদেরা ইংরেজি বলতে চাইতেন না। এ ছাড়া বর্ণবিদ্বেষের মতো বিষয়ও ছিল।

জার্মান অর্থনীতি রফতানির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের বড় বড় অনেক সংস্থার কার্যালয় রয়েছে দেশটিতে। তাই সেখানে ভাষা যাতে বাধা না হতে পারে তাই ইংরেজির ওপর জোর দেওয়া শুরু করে।

এই ইতিবাচক উন্নয়নের মধ্যেও চিন্তা থেকেই যাচ্ছে জার্মানির বর্ণবিদ্বেষের ঘটনা নিয়ে। যদিও শ্রমমন্ত্রী হেইল সংবাদমাধ্যম ‘ডিডব্লিউ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, কেউ তাঁর সঙ্গে সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি।

জার্মানিতে অনেক ভুয়ো সংস্থা রয়েছে যারা বিদেশিদের মোটা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে সে দেশে নিয়ে যায়। এই সব ভুঁইফোড় সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চলেছে জার্মানি।

মানব পাচারের মতো সমস্যাও জার্মান সরকারের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। পাচারকারীদের নজরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মহিলারা। বিভিন্ন টোপ দিয়ে তাঁদের জার্মানিতে পাচার করা হয়। যে কারণে জার্মানি এড়িয়ে চলেন অনেকেই।

শ্রম বাজারের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে কর্মী আনার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন কমাতে জার্মান সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কড়া পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনাও করছে।


জার্মানির জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ ভূরাজনৈতিক। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষকতা, নির্মাণ, কৃষি, প্রযুক্তি-সহ বিভিন্ন খাতে বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার ভাবনা তাঁদের। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জার্মানি যে ব্যবস্থাই নিক না কেন, সমস্যা আরও কিছুকাল থাকবে। কর্মী সঙ্কট মেটাতে সরকারকে একই সঙ্গে উদার এবং কঠোর নীতি অবলম্বন করতে হবে বলেও মনে করছে একাংশ।


No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages