‘অক্সিজেনের টান কতটা, আক্রান্ত হয়ে বুঝলাম’ - All News Paper

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, April 7, 2020

‘অক্সিজেনের টান কতটা, আক্রান্ত হয়ে বুঝলাম’

‘অক্সিজেনের টান কতটা, আক্রান্ত হয়ে বুঝলাম’


প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, যেন দমবন্ধ হয়ে মরে যাচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে একটু অক্সিজেনের জন্য যে মানুষ কতটা ব্যাকুল হতে পারে তা নিজে আক্রান্ত না হলে বুঝতাম না।”


কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফেরা এক নারী এভাবেই তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে। তিনি নিজেও ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাজ করেন।
ওই নারী ২৪ থেকে ৩১ মার্চ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা নেন। সুস্থ হওয়ার পর ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় ছাড়পত্র পান তিনি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত তাকে নিয়মিত অক্সিজেন নিতে হয়েছে।
মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরার অনুভূতি কেমন- তা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, যেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারলেন, তখন তার মনে হচ্ছিল, ‘নতুন জীবন’ পেয়েছেন।
“সবাইকে ফোন করে জানাচ্ছিলাম আমি সুস্থ হয়ে গেছি! বাসায় এসে স্বামী সন্তানের মুখ দেখার অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো যাবে না।”
তার ধারণা, তিনি যে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাজ করেন, সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা কারও মাধ্যমেই হয়ত তিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন।
ওই নারী জানান, গত ১০ থেকে ১২ মার্চ তার হাসপাতালে রাতের পালায় কাজ ছিল। ১২ মার্চ রাতে দুর্ঘটনায় আহত একজনের সঙ্গে এক চীনা নাগরিক এসেছিলেন, যিনি একটি প্রকল্পে কাজ করতেন। ওই চীনা নাগরিক তার কাছ থেকে একটি কলম নিয়ে কাজ শেষে সেটি ফেরতও দেন।
“জরুরি বিভাগে অনেক লোক আসে। তাদের মধ্যে কেউ ভাইরাসটি বহন করছিল কিনা বোঝার তো সুযোগ নেই। অন্য কোনোভাবে সংক্রমিত হয়েছি কিনা তাও বুঝতে পারছি না। আমার কোনো আত্মীয়স্বজন আক্রান্ত হয়নি। হাসপাতাল যাই আর বাসায় আসি- এই আমার রুটিন।”
অসুস্থতা শুরুর অভিজ্ঞতাও জানালেন ত্রিশ পেরোনো ওই নারী।
২০ মার্চ থেকে গলা ব্যথা, হালকা জ্বর আসে। ২১ মার্চ আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। তার স্বামী জরুরি কাজে ঢাকার বাইরে থাকায় সেদিন বাসায় দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি ছিলেন। এমন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলে বাচ্চারা কোথায় থাকবে সেটা চিন্তা করে নিজেই কিছু ওষুধ খেয়েছিলেন।
“গলা দিয়ে স্বরই বের হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল গলা চেপে আসছে। এজন্য অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছিলাম। আমার ইনচার্জকেও বললাম অবস্থাটা। তাকে অনুরোধ করলাম কোনো সমস্যায় যেন তাদের সাপোর্ট পাই। তিনি আমাদের হসপিটালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এই দুঃসময়ে সহকর্মীরা আমাকে যে সাপোর্ট দিয়েছেন তাও ভোলার নয়।”
সেদিন রাতেই আইইডিসিআর তার নমুনা নিয়ে যায়। ২৩ মার্চ প্রতিবেদন এলে তাতে কোভিড-১৯ ধরা পড়ে। অবস্থা ততটা খারাপ নয় বলে বাসাতেই ছিলেন। কিন্তু ২৪ তারিখে শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চলে যান।
“হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট, বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। আমাদের হাসপাতাল থেকেই অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়, তাতে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চলে যাই।”
হাপসপাতালে আইসোলেশনের দিনগুলো কেমন ছিল?
তার উত্তর- ‘খুবই বিটার এক্সপেরিয়েন্স’, কাউকে সে কথা বলে বোঝানো যাবে না।
“আইসোলেশন মানে আইসোলেশনই।... নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা জেলখানার চেয়েও ভয়াবহ। জেলখানাতেও তো অন্যের সঙ্গে কথা বলা যায়। তবে নিজেকে বাঁচানোর একটা বড় চেষ্টা ছিল। মোবাইলটা বড় সাপোর্ট ছিল। সবাই টেনশনে ছিল। তাদের সঙ্গে সবসময় কথা বলেছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা ছিল যেন ফিরে আসতে পারি।
“অসুস্থ হলে মানুষ প্রিয়জনের সান্নিধ্য চায়। কিন্তু আইসোলেশনে থাকলে সেই সুযোগ নেই। এটা অনেক বেশি প্যাথেটিক। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, কেউ যে এক গ্লাস পানি দেবে, সেই সুযোগও নেই। সেটাও আমাকে নিজেই করতে হয়েছে এই শরীর খারাপ নিয়ে।”
ওই নারীর জানান, কোভিড-১৯ এর সবগুলো লক্ষণই প্রকাশ পেয়েছিল তার। তবে শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি ছিল না কখনই।
“গলা, বুক, আঙ্গুল এবং হাত-পায়ের জোড়ায় ব্যথা ছিল। পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। মাথাব্যথায় চোখ মেলতে পারতাম না। নাক বন্ধ হয়ে থাকায় গলা দিয়ে শ্বাস নিতে নিতে গলা শুকিয়ে যেত। আমার বয়স কম, অন্য কোনো রোগ নেই বলে হয়তো আমি বেঁচে গেছি।”
তিনি জানান, প্রতিদিন হাসপাতালের কর্মীরা প্যাকেটে করে খাবার, তিন বেলা ওষুধ দিতেন।
ওই নারী স্বামী-সন্তানের সংস্পর্শে ছিলেন বলে আইইডিসিআর তাদের নমুনাও সংগ্রহ করেছে। তবে এখনও ফল পাওয়া যায়নি।
“আমার হাজবেন্ডের কিছুটা কাশি ছিল। একবার পরীক্ষায় তার নেগেটিভ আসে। শুক্রবার আইইডিসিআর আবার তার নমুনা নেয়। সঙ্গে বাচ্চাদের নমুনাও নিয়েছে। ছোট বাচ্চাটার কিছুটা কাশি আছে।”
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে শেষের তিন দিন পরপর তিনটি নমুনা নেওয়া হয় ওই নারীর। প্রতিবারই নেগেটিভ আসায় তাকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকার।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও দুর্বলতা এখনও পুরোপুরি কাটেনি বলে জানান  তিনি।  

https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1743968.bdnews

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages