আবারও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম, যেকোনো সময় আসবে ঘোষণা - All News Paper

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Sunday, February 25, 2024

আবারও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম, যেকোনো সময় আসবে ঘোষণা

 অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আবারও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম


দ্রুতই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে সরকার। এরই মাঝে ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ,জানা গেছে, ঘোষণা আসতে পারে যেকোনো সময়। এর আগে গত বছর তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছিলো সরকার।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বছরের শুরুতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ জনগণের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেবে।


যদিও বিদ্যুতের ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এবং বিক্রির মধ্যে ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে সবশেষ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার। এবছরও বিদ্যুতের দাম আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হতে পারে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। 

এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন গণমাধ্যমকে জানান, দুই ধাপে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হতে পারে। এতে করে বিদ্যুতে যে বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, তা অনেকটাই কমে আসবে।

এর আগে গত মঙ্গলবার সচিবালায়ে এক ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ডলারের দাম এত বেশি বেড়ে গেছে যে জ্বালানির দাম সহনীয় থাকলেও লোকসান হচ্ছে। সেজন্য দাম সমন্বয় করা হবে। তবে দাম খুব সামান্যই বাড়তে পারে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। লাইন গ্রাহকের (৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) মাসের বিল ২০ টাকার মতো বাড়তে পারে। এখন তারা যদি একটু সাশ্রয়ী হন, তাহলে বিল আগের অবস্থায় থাকবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকদের মিতব্যয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা।


তিনি জানান, ১ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহক রয়েছে যাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ টাকার মতো নেওয়া হয়। সেখানে হয়ত ৩০ থেকে ৩৫ পয়সার মতো বাড়তে পারে। তবে যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, বাসায় দুই থেকে ৩টি এসি ব্যবহার করে, তাদের বিল ৭০ পয়সার মতো বাড়তে পারে। তাদের মাসের বিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে গেলে কোনো সমস্যা হবে না। সরকার ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে। এখন রাজস্ব থেকে ভর্তুকি দিচ্ছে এটি খুবই ব্যয়বহুল।  


জানা গেছে, এবারও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৫ সালে কমিশন গঠন হওয়ার পর থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি গ্রাহক পর্যায়ে গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল।


এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, নির্বাহী আদেশেই দাম সমন্বয় করা হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে দিলে ৩ মাস সময় লাগত। এতে ৩ মাসে ২০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হতো। গ্রাহকরা এনার্জি সেভিংয়ে যাক তাহলে তাদের বিল বাড়বে না।


বিদ্যুতে ভর্তুকির হার শূন্যে নামাতে গত মাসে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বাল্ক মূল্যহার ৮০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠায় বিদ্যুৎ বিভাগে।একই সঙ্গে বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির ফলে বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর লোকসান শূন্যে নামাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন তারা।


প্রস্তাবে জানানো হয়, বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর বর্তমান গড় ট্যারিফ ৮ টাকা ২৫ পয়সা। তবে বিদ্যমান বাল্ক (ছয় টাকা ৭০ পয়সা) ট্যারিফে ভারিত গড়ে তারা ৫৫ পয়সা বা ছয় দশমিক ৬১ শতাংশ ঘাটতিতে রয়েছে। এর সঙ্গে বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধি করলে তাদের লোকসান আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই লোকসান শূন্যে নামিয়ে আনতে বাল্কের পাশাপাশি খুচরা পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।


গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবে জানানো হয়েছে, ভর্তুকি শূন্যে নামাতে বাল্ক মূল্যহার ছয় টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ১১ পয়সা করতে হবে। এর সঙ্গে বিতরণ লস, বিতরণ কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় যুক্ত করলে খুচরা মূল্যহার ভারিত গড়ে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা করতে হবে। এতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর লোকসান শূন্য হবে। এজন্য গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার গড়ে ছয় টাকা ৪৩ পয়সা বা প্রায় ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে।


এছাড়াও বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধিতে প্রস্তাব কার্যকর করলে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে পাঁচ শতাংশ হারে বাল্ক মূল্যহার বাড়াতে হবে। এতে করে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হবে না। 


এক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ মূল্যহার ফেব্রুয়ারিতে ১১ শতাংশ বাড়াতে হবে। এরপর মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার শতাংশ হারে এবং ডিসেম্বরে ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।


তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কোনো সঠিক সমাধান নয়। মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে কেবল আর্থিক বোঝার চাপই বাড়াবে।


জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ জানান, বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধি একেবারেই যৌক্তিক নয়। কারণ সরকার তাদের নিজেদের কারণে বা বলা যেতে পারে নিজেদের দোষেই দাম বাড়াচ্ছে। এখানে জনগণের কোনো দোষ নেই। একের পর এক পরিকল্পনাহীন পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। কিন্তু চালানোর মতো জ্বালানি নেই। ফলে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। এতে করে ভর্তুকির ওপর চাপ বাড়ছে আর সেই চাপ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে। অর্থাৎ সরকারের দায় জনগণের ওপর চাপানো হচ্ছে।


তিনি আরও জানান, মূল্যবৃদ্ধি কোনো সমাধান নয়। বিদ্যুৎ খাতের যেসব অব্যবস্থাপনা রয়েছে সেসব যদি ঠিক করা না হয়, তাহলে এই মূল্যবৃদ্ধি কোনো সুফল বয়ে আনবে না।


বেসরকারি চাকুরীজীবী টুম্পা জানান, সামনে আসছে রোজা। এর আগেই মাছ, মাংস থেকে শুরু করে প্রতিটা নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছে। এর মাঝে যদি সরকার বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ায় আর ঘোষণাটি কার্যকর হয় তাহলে এটা আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য খাড়ার উপর মরার ঘা এর মতো হবে।


No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages