নাশকতার দায়ে চার বছরে বিএনপি-জামায়াতের ১২৪১ জনের দণ্ড: প্রধানমন্ত্রী - All News Paper

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Wednesday, February 7, 2024

নাশকতার দায়ে চার বছরে বিএনপি-জামায়াতের ১২৪১ জনের দণ্ড: প্রধানমন্ত্রী

 নিজস্ব প্রতিবেদক, একাত্তর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের গত চার বছরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে এক হাজার ৯৬৭টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। এতে এক হাজার ২৪১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।


বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাহাজান খানের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান সংসদ নেতা।


স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।


এর আগে শাজাহান খান তার প্রশ্নে ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চান।


প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও তার দোসররা নির্বাচন প্রতিহতের নামে অযৌক্তিক ও জনসম্পৃক্ততাহীন আন্দোলনের মাধ্যমে আগুনসন্ত্রাস, নিরীহ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যা এবং জনগণের সম্পদ বিনষ্ট করার অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে। এই অশুভ শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানকেই অস্বীকার করছে না, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষার যে জনবান্ধব ধারার সৃষ্টি হয়েছে, তা বানচাল করে অতীতের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাইছে। বাংলাদেশকে তারা আবারও উগ্র জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-লুটপাটের সেই দুঃসহ দিনগুলোয় ফিরিতে নিতে চায়।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে ১৮৮ জন নিহত ও চার হাজার ৯৭৩ জন আহত হয়। এসব নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এ সময়ে আট হাজার ১০৫টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৯৬৭টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে।


এতে এক হাজার ২৪১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত করা মামলাগুলোর বিষয়ে তদন্তকাজ চলমান রয়েছে।


লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের মো. আবদুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা অগ্নিসংযোগ, হরতাল ও অবরোধের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে সারা দেশে সহিংস ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টিতে লিপ্ত হয়। ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা, ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলা ও ফিশপ্লেটের ক্ষতি করা, প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বিভিন্ন নাশকতামূলক ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা জনগণের জীবন ও সম্পদের বিপুল ক্ষতিসাধন করে।


বিএনপি-জামায়াতের অশুভ শক্তি জোট নির্বাচন প্রতিহত করার নামে সারা দেশে এক নজিরবিহীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠে, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ভূলুণ্ঠিত করার অভিপ্রায়ে গণপরিবহন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ হতে সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে ৬০০-এর বেশি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। ১৮৪টি যাত্রীবাহী বাস, ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ড ভ্যান, চারটি সিএনজি, চারটি প্রাইভেট কার, ১১টি পিকআপ, পাঁচটি ট্রেন, ১৫টি মোটরসাইকেল, তিনটি লেগুনা, একটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস, একটি অটোরিকশা, একটি উচ্চবিদ্যালয়, ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি বসতঘর, একটি বৌদ্ধমন্দির, একটি নৌকাসহ ৩২৮টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তাদের হরতাল-অবরোধে চালক, হেলপার, পুলিশ, বিজিবি, শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু লোক নিহত, আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছে। এ ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ট্রেনের নাশকতায় নিহত ৯ জন।


অগ্নিসংযোগ, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশে দক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচারব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিভিন্ন আইনী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


নির্বাচন কমিশন এখন কার্যকর প্রতিষ্ঠান


ভোলা-২ আসনের আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশনে পরিণত হয়েছে। সরকারের পদক্ষেপ ও উদার ও গণতান্ত্রিক মনোভাব, আইনের শাসনের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধাশীল থাকার কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে।


তিনি বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বের ৪৮টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছে। ২৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে অভিবাদন জানিয়েছে।


গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে


সরকারের অগ্রযাত্রায় দেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও অবিচল আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোনও অপশক্তিই বাংলাদেশের এ গণতান্ত্রিক ধারার উন্নয়ন অভিযাত্রার পথকে রুদ্ধ করতে পারবে না। আপমর জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে সরকার দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছি। ভবিষ্যতেও রাখবো ইনশা আল্লাহ।


নির্বাচন ঘিরে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ছিলো


আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের নির্বাচনে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিলো, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ছিলো। আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে এ দেশের ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে। তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। নির্বাচনে আমাদের জয়ী করে দেশের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।


শেখ হাসিনা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নির্বাচনের যারা আয়োজক ছিল-নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনী, জনপ্রশাসন, বাংলাদেশের জনগণ-সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবার জন্য।


নিজ আসনের জনগণের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, আমি যে এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছি, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার জনগণের প্রতি। নির্বাচনে আমার খুব খাটতে হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণ সবাই মিলে নির্বাচনে আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচনি বৈতরণি পার করেছে।


চয়ন ইসলামের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম ও গঠনমূলক পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ বিগত ১৫ বছরে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা আগামী পাঁচ বছরেও অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।


আমরা এখন অতটা খারাপ নেই

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় পড়ে গেলাম। ফলে আমাদের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, কিছু খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হতে হয়েছে, কিছু সংকুচিত করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরা এখন অতটা খারাপ নেই।

তিনি বলেন, ডলারের সঙ্কট যথেষ্ট ছিলো, এখন ঠিক সে রকম সঙ্কট নেই। আমদানি-রপ্তারির ক্ষেত্রে আমরা মনিটরিং বাড়িয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে এলসি খোলার নামে যতটা প্রয়োজন নয়, তার চেয়ে বেশি দিয়েও অনেকেই এলসি খোলে কিন্তু ওই টাকাটা ফেরত আসে না। এ কারণে সরকার পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্লুমবার্গের মূল্যতালিকা দেখে, সেটা মনিটর করে এলসি খুলতে দেয়া হয়। এলসি খুলতে যে অসুবিধার কথা বলা হচ্ছে তা নয়, আগে যেভাবে যখন-তখন খোলা হতো, সেটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

রপ্তানি আয় খুব একটা কমেনি মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, যেসব দেশে আমরা রপ্তানি করি, এমনকি যেগুলো খুব ধনী দেশ, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, বাজার সংকুচিত হয়েছে, সেখানে অর্ডার কমেছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা খুব চাপে আছে, তাদের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তারাই ফলাফলে হয়তো কিছুটা কমেছে।

রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বিকল্প বাজার খুঁজে বেড়ানো ও রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে ব্যবস্থা নিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষক যথাযথ উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পেলে সমস্যা হবে। মূল্যবৃদ্ধি পেলে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ কষ্ট পাবে।










No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages