আপাদমস্তক পরিবর্তনের সুর বিএনপিতে - All News Paper

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Monday, January 22, 2024

আপাদমস্তক পরিবর্তনের সুর বিএনপিতে

 খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ১১:২৯ এএম, ২২ জানুয়ারি ২০২৪


বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। ভোট বর্জন করলে বিএনপির প্রাপ্তির খাতা শূন্য। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অধিকাংশ নেতাকর্মী হতাশ। দলের সব পর্যায়ের নেতৃত্ব নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ। এরই মধ্যে আলোচনায় দল পুনর্গঠন। বিশেষ করে কেন্দ্র-তৃণমূলের মধ্যমসারির নেতারা জোর আলোচনা তুলছেন। যদিও সিনিয়র নেতারা মনে করেন, বিষয়টি তারেক রহমানের ওপর নির্ভর করছে।


দলীয় সূত্র মতে, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের কথা। ২০১৬ সালের মার্চে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেটাই শেষ। সেই সনাতনী নেতৃত্ব নিয়েই ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে করুণভাবে পরাস্ত হয়েছে বিএনপি। এ অবস্থায় দলের সব পর্যায়ে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তে যাচ্ছে দলটি। সার্বিক পরিস্থিতি নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করে আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত ত্যাগীদের নিয়ে দল আরও শক্তিশালী করবে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে দল শক্তিশালী ও গতিশীল করার বিষয় থাকলেও তা নানান কারণে হচ্ছে না। আগামী ছয় মাসের মধ্যে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দল পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে যে নির্বাচন করেছে তাতে আমাদের দলের কারা ঈমানদার কারা বেঈমান সেই পরীক্ষাও হয়ে গেছে। পরীক্ষিত ঈমানদারদের নিয়ে দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী এবং আন্দোলনমুখী করা উচিত।’


এদিকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও তাদের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যপদ থেকে শুরু করে দলের নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর বিপরীতে বেশ কিছু নেতা আলোচনায় রয়েছেন।


স্থায়ী কমিটির জন্য যারা আলোচনায়

ঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের নয়টি পদ শূন্য। যারা রয়েছেন তাদের অধিকাংশই বার্ধক্যজনিত শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এ পরিস্থিতিতে দলের এই সর্বোচ্চ ফোরামের জন্য বেশ কিছু নাম নেতাকর্মীদের মুখে আলোচিত হচ্ছে।


আলোচনায় আছেন আব্দুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ফজলুর রহমান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, বরকতউল্লা বুলু, আফরোজা খান রিতা, তাজমেরী এস ইসলাম, শামসুজ্জামান দুদু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জহির উদ্দিন স্বপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, আসাদুজ্জামান রিপন, আমানউল্লাহ আমান এবং খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির চৌধুরী।


ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় যারা

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদ ৩৭টি। এই ফোরামে অন্তত দশটি শূন্য পদ রয়েছে। পুনর্গঠন ইস্যুতে এ পদ ঘিরে কয়েকটি নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে।

যাদের মধ্যে রয়েছেন মজিবর রহমান সরোয়ার, হারুনুর রশিদ, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, আরিফুল হক চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারুক, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মাহাবুব উদ্দিন খোকন, ফজলুল হক মিলন, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাহাদাত হোসেন, মিজানুর রহমান মিনু এবং খায়রুল কবির খোকন।

মহাসচিব পদে আলোচনায় দুজন


২০১১ সালের ২০ মার্চ বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করেন। এরপর ২০১৬ সালে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কয়েকদিন পর ৩০ মার্চ তাকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব ঘোষণা করা হয়। দল পুনর্গঠনের ইস্যুতে মহাসচিব পদে দলের নেতাকর্মীদের আলোচনায় আছেন দুজন। সালাউদ্দিন আহমেদ ও রুহুল কবির রিজভী।


সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটির প্রবর্তন হয়। পরবর্তীসময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে রুহুল কবির রিজভী এ দায়িত্বে আছেন। এই পদেও দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।


যুগ্ম মহাসচিব


বর্তমানে দলে সাতজন যুগ্ম মহাসচিব রয়েছেন। এ পদ ঘিরে নতুন করে আলোচিতদের মধ্যে রয়েছেন আহসান হাবীব দুলু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, রফিক শিকদার এবং আশরাফ উদ্দিন নিজান।


দপ্তর সম্পাদক


রুহুল কবির রিজভী সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে বর্তমানে দপ্তরের দায়িত্ব রয়েছেন। দল পুনর্গঠনের আলোচনায় এ পদে কয়েকজনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ওমর ফারুক শাফিন ও হাসান মামুন।


১০ সাংগঠনিক বিভাগের সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় যারা


সুলতান সালাউদ্দিন টুকু-ঢাকা, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ-চট্টগ্রাম, এবিএম মোশাররফ হোসেন-বরিশাল, আজিজুল বারী হেলাল-খুলনা, জিকে গউস-সিলেট, হাজি ইয়াসিন এবং শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক-কুমিল্লা, আব্দুল খালেক-রংপুর, আমিরুল ইসলাম আলিম-রাজশাহী, সফিকুর রহমান কিরণ, শহিদুল ইসলাম বাবুল এবং আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন-ফরিদপুর এবং মো. শরিফুল আলম-ময়মনসিংহ।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. খোন্দকার আকবর হোসেন জাগো নিউজ কে বলেন, ‘ব্যর্থতা-সফলতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ব্যর্থদের সরিয়ে দিয়ে যোগ্যদের জায়গা দেওয়া উচিত। গত আড়াই-তিন মাসে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে দল পুনর্গঠন করা দরকার। চলমান আন্দোলন-কর্মসূচির পাশাপাশি দলের পুনর্গঠনও রুটিনমাফিক হওয়া দরকার।’


রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোরশেদ আলম বলেন, ‘দলের পুনর্গঠন জরুরি। চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যারা ভূমিকা রাখছে তাদের যথার্থ স্থানে বসানো দরকার এবং যারা ফাঁকিবাজি করছে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।'


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের একটা ধাপ শেষ হয়েছে। আরেকটি ধাপের আন্দোলনে রয়েছি। শিগগির আমাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে। দল পুনর্গঠন হলে সাবেক ছাত্রনেতারা সব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।’


বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবার সঙ্গে আলোচনা করছেন। দলের পুনর্গঠনের ব্যাপারে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’

তবে দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’



আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ কখনো সদিচ্ছাপ্রসূত রাজনৈতিক আচরণ করেনি: রিজভী



No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages