শেরপুরে স্কুল কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমূল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা বাজারসংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী টেঙ্গরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পদ থেকে আয়ের প্রায় কোটি টাকা লুটপাট ও ব্যাপক দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিসে ওই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে লিখিত অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন স্কুল কমিটির সদস্য সচিব ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সদস্য মুরাদ আহমেদ ও মইনুল ইসলাম।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ অক্টোবর বুধবার টেঙ্গরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও পদাধিকার বলে সদস্য সচিব, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকে বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তীর তুলে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিক সম্মেলন ও মানববন্ধন করে ম্যানেজিং কমিটির অপর একটি অংশ। অভিযোগকারীরা তাদের ওই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ্য করে জানান, প্রতিবছর জমি থেকে উপার্জিত আয় ৮ লক্ষ টাকা, জলাশয় থেকে আয় ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা, দোকান থেকে আয় ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন বাবদ আয় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং
৬ষ্ঠ- অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৩০ লক্ষ ৯ হাজার টাকা।
এদিকে, ওইসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্কুল কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান জানান, বিদ্যালয়ের রেজিষ্টার অনুযায়ী আমার বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষীর্থীর সংখ্যা ৯৯০ জন এবং নভেম্বর/১৮-নভেম্বর/১৯ পর্যন্ত আবাদি জমির লিজ, বার্ষিক পরীক্ষার ফি, আংশিক বেতন, নতুন ভর্তি ও সেশন চার্জসহ মোট আয় ১৩ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা। দোকান ঘর ভাড়া থেকে মোট আয় ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা, শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ৬ লক্ষ ১ হাজার টাকা। যাহা ৩০ অক্টোবর বুধবার ম্যানিজিং কমিটির সভায় অনুমোদিত। এ আয়ের অংশগুলো ঘর নির্মাণ, উন্নয়নমূলক কাজ, বেঞ্চ তৈরী, বাথরুম মেরামত, টিনসেড ঘর নির্মাণ, বিদ্যালয়ের ঘর নির্মাণ এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়। জলাশয়ের লীজ প্রতিবছর বলা হলেও, প্রকৃত পক্ষে ৩ বছরের জন্য ওই লীজ দেওয়া হয়ে থাকে। এস.এস.সি পরীক্ষার ফরম ফি ২৫ শত টাকা বলা হলেও, প্রকৃতপক্ষে ‘ব্যাংক এশিয়া’য় ¯িøপের মাধ্যমে তা ১৯ শত টাকা নেওয়ার রশিদ রয়েছে। ওই সাংবাদিক সম্মেলন ও মানববন্ধনে এ ধরনের মিথ্যাচার তারা করেছে। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রের সামিল।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জামানতের টাকা দিয়েই দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া যা ভাড়া পাওয়া যায় তা স্কুলের পিয়ন, নাইট গার্ডসহ বিভিন্ন খরচে শেষ হয়ে যায়। গত ৩০ অক্টোবর কতিপয় কছিু লোভী ও অসৎ লোকেরা যে সাংবাদিক সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে, আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
প্রতিবাদ ও সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন রাণীশিমূল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, মেজবাহ উদ্দিন বখতিয়ার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর বুধবার দুপুরে প্রায় ৩২ একর জমিসহ সম্পদসমৃদ্ধ ৮০ বছরের পুরোনো ওই স্কুলটিকে নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত চেয়ে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত ৩ জন সদস্য দুদকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য মানববন্ধন কর্মসূচীও পালন করেছেন।
ওই লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪০ সালে তৎকালীন জমিদার কামিনী সাহা রায় ও এলাকার ধনাঢ্য শিক্ষানুরাগীরা প্রত্যন্ত সীমান্ত অঞ্চলে ওই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। গত ৭ মাস আগে ২ বছর মেয়াদী বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন সিদ্দিকুর রহমান এবং পদাধিকার বলে সদস্য সচিব হন প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান। কমিটি গঠনের পর অন্যান্য সদস্যরা বারবার কমিটির মিটিং ও স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলেও এ পর্যন্ত কোন মিটিং হয়নি, পাওয়া যায়নি হিসাবও। বিদ্যালয়ের ৩২ একর জমির মধ্যে বাজারের ভেতর ১০ একর জমিতে অন্তত: অর্ধশতাধিক বাণিজ্যিক দোকানঘর ও বিশাল একটি ধানের আড়ৎ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওইসব দোকান স্কুলের ম্যাানেজিং কমিটির সভাপতির নিজেসহ তার আত্মীয়-স্বজনের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকি প্রায় ২০ একর জমিতে রয়েছে পুকুর ও আবাদী জমি। ওইসব বাণিজ্যিক দোকান ও বাকি জমি থেকে মোটা অংকের জামানত নেওয়া হলেও সেগুলোর কোন হিসাব বা জবাবদিহিতা নেই।
সম্প্রতি স্কুলের জমিতে ‘ব্যাংক এশিয়া’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং ভাড়ায় বসানো হয়েছে। দলিলের শর্তে দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ লক্ষ টাকা জামানত ও মাসিক এক হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এরূপ অন্যান্য বাণিজ্যিক দোকানগুলো থেকে জামানত ও ভাড়া আদায় করা হলেও তার কোন হিসাব নেই। স্কুলের নামে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হলেও স্কুলের ব্যাংক হিসেবে কোন টাকা জমা হয়নি। ব্যাংক হিসেবে আছে সম্প্রতি গাছ বিক্রি করার মাত্র আড়াই লাখ টাকা। ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরী করে ওইসব টাকা যে যখন ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে থেকেছেন বা আছেন তারাই যোগসাজসের মাধ্যমে লুটপাট করে খাচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
এ সব অভিযোগের পরিপেক্ষিতে সাংবাদিক সম্মেলন করলো স্কুল কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও সদস্য সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান।
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post Bottom Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.


No comments:
Post a Comment